প্রতিনিধি ৮ জুলাই ২০২৫ , ১:৩৩:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ মনোয়ার হোসেন রুবেল ||
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক-নার্সরা। বর্তমানে ভর্তি আছেন ৫৮ জন, এর মধ্যে ৮ শিশু। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি ৩৪ জন, ছাড়পত্র ৩৩ জন, রেফার্ড ৩ জন। এ পর্যন্ত মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৮০৭ জনে পৌঁছেছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চাপ সামলাতে সাধারণ ওয়ার্ডের বাইরেও আলাদা করে বারান্দায় রোগীদের জন্য বেডের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে—ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা দমনে পৌরসভা কী করছে?
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকায় মশার উপদ্রব এখন আর মৌসুমি নয়, বরং বছরজুড়ে চলা এক নাগরিক দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। দিনে এডিস আর রাতে কিউলেক্স মশার আক্রমণে অতিষ্ঠ শহরবাসী। ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়লেও স্বাস্থ্য বিভাগ শুধু সতর্ক থাকতে বলছে। পৌরবাসীর অভিযোগ, প্রতিদিন মশার কামড়ে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু-বৃদ্ধসহ অনেকে।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে—এ বিষয়ে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তাদের মতে, এখনই ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। অভিযোগ উঠেছে, দায়িত্বপ্রাপ্তরা এটিকে কেবল চাকরি হিসেবে দেখছেন; সেবার মানসিকতা ও আন্তরিকতা না থাকায় ডেঙ্গু মোকাবিলায় ব্যর্থতা দেখা দিচ্ছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাসুদ পারভেজ জানান, বর্তমানে ৫৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত মাসের তুলনায় এ মাসে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জটিল রোগীদের রাজশাহীতে রেফার্ড করা হচ্ছে। সামনে বর্ষা মৌসুম থাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম মজুত আছে, তাই চিকিৎসা ব্যবস্থায় কোনো সমস্যা হবে না বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
ডেঙ্গুর বিস্তার নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. একেএম শাহাব উদ্দিন বলেন, জেলার ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তবে প্রতিরোধে নিয়মিত কাজ চলছে। আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি জনসচেতনতায় মাইকিংসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি মনে করেন, সাধারণ মানুষ সচেতন হলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কমানো সম্ভব।
পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন অর রশীদ জানান, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ফগিং, লার্ভিসাইডিং, সচেতনতামূলক প্রচার, ১০ হাজার লিফলেট বিতরণ, মাইকিং ও মসজিদের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হয়েছে। ডেঙ্গুর হটস্পট চিহ্নিত করে সেখানে ক্রাশ প্রোগ্রাম চলছে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু একটি পরিবেশগত সমস্যা, তাই ব্রিডিং স্পট ধ্বংসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।