• Uncategorized

    অপারেশন ঈগল হান্ট’ মামলায় সাবেক এসপি আসাদুজ্জামান ২ দিনের রিমান্ডে

      প্রতিনিধি ৩ জুলাই ২০২৫ , ৩:১৮:৫৩ প্রিন্ট সংস্করণ

    নিজস্ব প্রতিনিধি বদিউজ্জামান রাজাবাবু

     

    চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে আলোচিত জঙ্গিবিরোধী অভিযান

    ‘অপারেশন ঈগল হান্ট’ মামলায় নোয়াখালীর সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামানকে ২ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

     

    বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন চৌধুরী রিমান্ডে নেওয়ার এই নির্দেশ দেন। বিকেল ৩টায় আসাদুজ্জামানকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্ত কর্মকর্তা শিবগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এসএম শাকিল হাসান তার ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আসামিপক্ষ রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

     

    এদিন সকালে একই আদালত তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। নোয়াখালী কারাগার থেকে আসাদুজ্জামানকে শিবগঞ্জ আমলী আদালতে হাজির করা হয়। ঘটনার সময় তিনি কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের এডিসি ছিলেন। আসাদুজ্জামান ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরেও নোয়াখালীর পুলিশ সুপার ছিলেন।

     

    রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল ওদুদ বলেন, পুলিশ অফিসার ও পুলিশের বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা মিলে ষড়যন্ত্র করে শিবগঞ্জের একটি বাড়িতে জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করে। জঙ্গি নাটকের ঘটনার সৃষ্টি করে আবুল কালাম আবু নামে এক মুদি দোকানিকে হত্যা করে। পরে হেলিকপ্টারে আরও তিনটি বস্তাবন্দি লাশ বের করে ওই বাড়িতে নিয়ে যায়।

     

    পরবর্তীতে তাদের পেটের মধ্যে বোমা বেঁধে রেখে রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়। নৃশংস এ ঘটনার ৭ বছর পর ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর শিবগঞ্জ থানায় মামলা করেন নিহত আবুর স্ত্রী সুমাইয়া খাতুন। এই মামলা সাবেক এসপি তৎকালির কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের এডিসি আসাদুজ্জামানকে দুই দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত।

     

    মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পুলিশ অফিসার ও পুলিশের বিভিন্ন সংস্থার আইনশৃঙ্খলা সদস্যরা মিলে ষড়যন্ত্র করে আমার বাড়িতে বানোয়াটভাবে জঙ্গি নাটকের ঘটনা ঘটায়। আসামি সৈয়দ নুরুল ইসলামের (ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজির) বাড়ির শিবগঞ্জ এলাকায়, সেই কারণে তাদের সাথে ষড়যন্ত্র করে আমার বাড়িতে জঙ্গি নাটকের ঘটনার সৃষ্টি করে আমার স্বামী আবুল কালাম আবুকে হত্যা করে। পরে আরো জানতে পারি যে, দুটি হেলিকপ্টার আমার বাড়ির সংলগ্ন ত্রীমোহনীতে নামে এবং আশেপাশের লোকজনকে দূরে সরিয়ে দেয়।

     

    হেলিকপ্টর দুটির মধ্যে একটি থেকে তিনটি বস্তাবন্দি লাশ বের করে আমার বাড়ির মধ্যে নিয়ে যায়। অন্য হেলিকপ্টর থেকে উল্লিখিত আসামিদের মধ্যে ৩/৪ জন বের হয় এবং পূর্বেই ত্রীমোহনীতে অবস্থানে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭/৮ জন বস্তাবন্দি ৩টি লাশ নিয়ে আমার বাড়ির ভেতরে রেখে বের হয়ে আসে। ২৭ এপ্রিল দুপুরের পর আমার বাড়ির মধ্যে বিকট শব্দ হয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়। পরবর্তীতে জঙ্গি নাটক সাজানোর জন্য বস্তা বন্দিযোগে হেলিকপ্টারে করে নিয়ে এসে তাদের পেটের মধ্যে বোমা বেঁধে রেখে রিমোট কন্ট্রোল দ্বারা বিষ্ফোরণ ঘটায়।

     

    উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৬ এপ্রিল। বুধবার গভীর রাত। শিবনগর গ্রামে হঠাৎ শত শত পুলিশ। প্রত্যন্ত গ্রামে অচেনা সাঁজোয়া যান, জলকামান, প্রজেক্টাইল, কাইনেটিভ আরও কতো কী। ভারী অস্ত্রে সজ্জিত পুলিশের একাধিক বিশেষ বাহিনী। রাত তখন ১২টা বেজে ২৫ মিনিট। মাত্র ১০ মিনিটে একটি বাড়ি ঘিরে ফেলে পুলিশ। আশপাশের রাস্তাঘাট সিলগালা করা হয়। মানুষের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। তখনো দুই শিশু সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ঘুমিয়ে থাকা আবুল কালাম আজাদ ওরফে আবুর পরিবার কিছু বুঝতে পারেনি।

     

    ঘুমিয়ে থাকা পরিবারটি কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাসার মূলফটকে তালা দেয় পুলিশ। চারিদিকে মুর্হুমুহু গুলি। সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট শব্দ। আতকে ওঠেন গ্রামবাসী। অজানা আতঙ্কে অনেকে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করেন। পুলিশ আবুর ঘরের দরজা, জানালা, দেয়ালে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। সেদিন এক আবুকে মারতে ২ হাজার ১২৬ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। ওই অভিযানে অন্তত ১৭টি বিভিন্ন ধরনের গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়। অভিযানের নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন ঈগল হান্ট’।

    আরও খবর

    Sponsered content